সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

ভবঘুরে কাছে ছন্নছাড়া’র পত্র আওয়াল হোসেন টুটুল

সেঁজুতি নিউজ / ১২৪ বার দেখা হয়েছে
Update : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

প্রিয় ভবঘুরে,
আপনার খোলা চিঠি (দুই) আমাকে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছে। আমরা, নগরবাসীরা, ‘নিষ্প্রাণ নগরীর অন্ধ প্রকোষ্ঠে রাজধানীর রাজবন্দী’ হয়ে, বিলাস-বাসনার মদে মত্ত থাকি আর জৌলুশে ঝলসে ওঠা নিয়ন আলোয় উদ্ভাসিত বিজ্ঞাপনের দিকে তাকিয়ে, তারই মাপকাঠিতে জীবনকে পরিমাপ করতে চাই।
যন্ত্রবৎ মানুষগুলোর হাত আছে, আদর নেই হৃদয় আছে হৃদ্যতা নেই। আদতে, এই নিষ্করুণ নগরবাসীদের, আমি ‘মানুষ’ বলতেই নারাজ। এরা একেকজন মানুষের অবয়বে মানুষের সঙ মাত্র।
আর স্বাধীনতা! সে তো আজকাল চাটুকারের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। যে-আদর্শকে বুকে ধারণ করে এ্যাতো প্রাণের বলিদান, এ্যাতো রক্তস্রোত, এ্যাতো সম্ভ্রমবিসর্জন, এই মহান আদর্শকে দলিত করে, সে আদর্শের বুলি আওড়িয়ে, কতিপয় লেবাসধারী লোক নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে মনের মতোন।
হ্যাঁ, ভবঘুরে, আপনার লেখার দ্যুতির প্রখরতা অনেক বেশি এবং আর আপনার ‘মসি’ নামক লেখনি অত্যন্ত ধারালো- এটা আমাকে মানতেই হবে। আপনি ঠিকই বলেছেন। বিষাক্ত নগরীর বিষে ভরা বাতাসে, মানবীয়গুণসম্পন্ন মানুষগুলোর দম বন্ধ হয়ে আসবারই কথা।
আমিও আপনার মতোন একই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি হয়তো বা। জানেন ভবঘুরে, নগরপিতাদের নিষ্ঠুর হাতে প্রতিদিন প্রকৃতির ব্যবচ্ছেদ হতে দেখে আমার বুকের নীল আসমানেও বিষাদের অপরিমেয় কালো মেঘ জমা হয়। শ্রাবণঘন বর্ষণের মতোন, আমারও ইচ্ছে করে দুচোখ ভাসিয়ে কাঁদতে। কিন্তু চাইলেই কি কাঁদা যায়, বলুন! কবি তাঁর গানে বলেছেন,
“…সভ্যসমাজ, নগর জীবন লোকসমূখে কান্না বারণ
নিরব-অশ্রু ঝরাই আমি, দুঃখ একাই বই।
সঙ্গ দেবার সঙ্গী কোথায়, যখন একা হই!”

সঙ্গ দেবার কথা দূরে থাক, ভবঘুরে। আমাদের ভাবনাগুলো ভাগাভাগি করে নেবার মানুষও তো আজ দুষ্প্রাপ্য।
জানেন ভবঘুরে! মানুষের আচরণের দ্বৈততা এবং বৈপরীত্য দেখে, এখন আর কান্না পায় না। লজ্জাও না। বরং, উল্টো হাসি পায়। তিরস্কারের হাসি। অন্তরে কলুষ লুকিয়ে রেখে, লোকসমক্ষে সাধু সাজবার কী দুর্দান্ত প্রয়াস মানুষগুলো!
আর… ওই যে সমানাধিকারের কথা বলেছেন না! সেটাকে আমি একটা প্রোপাগ্যান্ডা বলে মনে করি। সুকৌশলে নারীদের ভোগ করা এবং শেকলে বন্দি রাখার ভিন্নতর চাতুরী মাত্র। আমাদের নারীসমাজও একেবারেই বোকা! হোতাদের পাতা টোপগুলো তারা খুব সহজেই গিলে নেয়। তারা অনেক বড় বড় ডিগ্রি এবং সনদ অর্জন করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষিত হয়ে ওঠেনি। এ কথা শুধু যে নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তা কিন্তু নয়। অনেক পুরুষের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। এই মানুষগুলোকে আমি ‘সার্টিফিকেটধারী মূর্খ’ বলে আখ্যায়িত করে থাকি।
রবিঠাকুরের দ্বিতীয় চিত্রাঙ্গদার দেখা বাস্তবিক অর্থে, সমাজে আমরা কোনোকালে পাবো কি না, সন্দিহান।
আমি জানি, ভবঘুরে, মনস্তাত্ত্বিকভাবে আপনি ভালো নেই। আমাদের, যাদের মানসলোক প্রকৃত আলোয় আলোকিত, তাঁরা, সমাজে চোখ মেলে শুধু জমাটবদ্ধ, গাঢ় অন্ধকার ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাই না। কবে হবে, জানিনা। প্রত্যাশা রাখি প্রত্যেকের অন্তরলোকে সত্য-সুন্দর ও ন্যায়ের পথ বেয়ে পবিত্র-আলো প্রবেশ করুক। সে-আলোকের প্রতিফলিত রশ্মির দ্যুতিতে ঘুচে যাক আমাদের মনের গোমোট অন্ধকার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর