সেঁজুতিনিউজ ডেস্কঃ
এক
হাই হিলের জুতোয় দ্রুত খটখট শব্দ তুলে ঘরে প্রবেশ করলো তৃপ্তি। ঘরে প্রবেশ করেই, ধড়াম করে ভেতর থেকে দরোজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো সে। দরোজা ভেড়ানোর শব্দের তীব্রতা এ্যাতোই বেশি ছিলো যে, তিনতলা ভবনটায় মনে হলো য্যানো রিখটার স্কেলে নয় মাত্রার একটা ভু-কম্পন ঝাঁকুনি দিয়ে গ্যালো। ঝাঁকুনিতে দরোজায় আঁটা দুই ফিট বাই সাড়ে পাঁচ ফিট লুকিংগ্লাসটা ঝনঝন শব্দে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়লো। শব্দের তীব্রতায় চিলেকোঠা থেকে নিরাপত্তাকর্মী, খোরশেদ দৌড়ে এলো— কী হয়েছে, জানতে। তার শ্বাস প্রশ্বাস চলছে অত্যন্ত দ্রুতলয়ে। দরোজা খোলা পেয়ে, এক দৌড়ে সে তৃপ্তির মা, মিসেস রায়নার কাছে চলে এলো। ইতিমধ্যে মিসেস রায়নাও তৃপ্তির এ্যামোন অদ্ভুত আচরণের কারণ সন্ধানে বের হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তৃপ্তির দরোজায় কড়া নাড়বেন, এ্যামোন সময় তার সামনে এসে দাঁড়ালো খোরশেদ। “আন্টি, আপনেগর বাসায় কি কুনো দুর্গটনা অইছে, না কি? এ্যাত জুরে শব্দ অইল ক্যা?” তার শ্বাস প্রশ্বাসের লয়ের দ্রুততা যতোটা ছিলো, ইচ্ছাকৃতভাবে তারও চেয়ে বাড়িয়ে দিয়ে বললো খোরশেদ। মিসেস রায়না তৃপ্তির দরোজায় কড়া না নেড়ে, কপাল ও ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে খোরশেদকে বললেন, “এ্যাই ছেলে! তরে না কতদিন কইছি, আমারে ‘আন্টি’ ডাকবি না, ‘আপা’ ডাকবি! আর আমার বাসায় দুর্ঘটনা হইলে তর কী, অ্যা!”
দুই
ছোটোবলা থেকেই মেয়েটার সিনেমার প্রতি ছিলো ব্যাপক আগ্রহ। তার গ্রামে তৃপ্তির বাবা ছিলেন একমাত্র সরকারি চাকরীজীবী। সে সুবাদে গ্রামের অন্য সবার চেয়ে তাদের আর্থিক অবস্থা ছিলো তুলনামূলক ভালো। এখনকার মতো, গ্রামে তখনো বিদ্যুৎ আসেনি। ছিলোনা সেভাবে টেলিভশন। ব্যাটারির সাহায্যে চালানো হতো সাদাকালো টিভিগুলো। চ্যানেলের সংখ্যা ছিলো মাত্র একটা। সেটা, বিটিভি। এখনকার মতো চব্বিশ ঘন্টার সম্প্রচারও ছিলোনা তখন। সপ্তাহে একদিন সিনেমা হতো— শুক্রবারে। ছেলে-বুড়ো-কিশোর-কিশোরীসহ গ্রামের সব বয়সের, সবাই আগেভাগে কাজ সেরে, এসে জুটতো তৃপ্তিদের বাড়িতে। উৎসবমুখর পরিবেশে, সপরিবারে সবাই সিনেমা দেখতো মজা করে। তৃপ্তি তখনো বেশ ছোটো। সবে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। সিনেমার কাহিনী জিনিসটা কী, তখনো তার বুঝে ওঠার বয়স হয়নি। তবু সিনেমা দেখে মাঝে মাঝে সে হাসতো, কখনো সখনো কাঁদতো। অন্যদের দেখাদেখি নয়, হয়তো শৈশবের অতি কোমল অনুভূতি খুব সহজেই আলোড়িত হতো, তাই। তখন থেকেই তৃপ্তির মনে হতো জীবন কতো বৈচিত্র্যময়! তারও ইচ্ছে হতো সিনেমার চরিত্রের মতো অভিনয় করতে।
একদিন তৃপ্তির বাবা বাড়িতে। ঘরভর্তি লোকজন। গায়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে পাকা মেঝেতে বসে। সবার নজর টিভির পর্দায়। বৈশাখের তীব্র গরমে লোকজনের ঘামে মেঝেটা একেবারে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে উঠেছে য্যানো এই মাত্র হালকা এক পশলা বৃষ্টিতে শুকনো মাটির উপরিস্তর ভিজে, জনচলাচলে কর্দমাক্ত হয়ে উঠেছে। দু একজন গায়ের গামছা দিয়ে বাতাস করছে। কারো আবার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। তৃপ্তির বাবা তাদের মেহগনি কাঠের খাটটার একপাশে হেলান দিয়ে বসে টিভি দেখছিলেন। তার ডান হাতে একটা তালপাতার পাখা দুলছে। সেটা তার যতোটা না নিজের জন্য, তার চেয়ে বেশি দুলছে তার কন্যার জন্য। তৃপ্তি তার বাবার গা ঘেঁষে বসে। চারপাশে কী ঘটছে, তার প্রতি কোনো খেয়াল নেই তার।
কিছুক্ষণ পর বিজ্ঞাপন বিরতি শুরু হলে, অনেকেই গরম থেকে রেহাই পেতে বেরিয়ে পড়লো বাইরে। অকস্মাৎ বসে থাকা মানুষের মধ্যে নড়চড় হওয়ায়, ভ্যাঁপসা গরমটা আরো খানিকটা বেড়ে গ্যালো। হাতের তালপাখাটার দোল বাড়িয়ে দিয়ে তৃপ্তির বাবা বললেন, ‘ছমির ভাই, এবার কি আউশ ধান বুনছ?’
ছমির তার কাঁধে রাখা ধূলোমলিন গামছা দিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে বললো, ‘না, তালেব বাই, ইবার ত বিষ্টিই নাই। বিষ্টি অইলে বুনমু কুরখানি জমি।’
তিন
তৃপ্তি ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ-তে ভর্তি হয়। মূলত তৃপ্তির ইচ্ছে ছিলো চলচ্চিত্র সংক্রান্ত কোনো সাবজেক্টে পড়াশুনা করার। কিন্তু কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়েই তার ভর্তির সুযোগ হয়ে ওঠেনি। ভর্তি হয় সে বিবিএ পড়তে, কিন্তু নায়িকা হবার স্বপ্নের জাল বুনে বুনেই তার সময় কাটে। বন্ধুদের আড্ডায় যতোটা না তার আলোচনা হয় পড়াশুনা আর ক্যারিয়ার নিয়ে, তার চেয়ে বেশি আলোচনা হয় তার স্বপ্নের নায়িকা হবার গল্প করে। নায়িকা হবার জন্য যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, বেশিরভাগই তৃপ্তির মধ্যে রয়েছে। বাহ্যিক দৈহিক সৌন্দর্য, শারীরিক গঠণ, বিদ্যাবুদ্ধি বা জ্ঞান।
বন্ধুদের আড্ডায় ‘তৃপ্তি’ নামটার চেয়ে সে ‘নায়িকা’ নামেই বেশি পরিচিত। বন্ধুদের মধ্যে থেকে মাঝে মাঝে কেউ কেউ বলে, ‘কি রে নায়িকা! তোর সিনেমার নায়ক কাকে বানাচ্ছিস?’
রাজহাঁসের মতো লম্বা গ্রীবাটা নাড়তে নাড়তে তৃপ্তি সানন্দে জবাব দ্যায়, ‘তালিকায় তো অনেকেই আছে। প্রতিযোগিতা দিতে হবে। দেখি, কে জয়ী হয়!’ বন্ধেুদের মধ্যে এ নিয়ে একদফা হাসাহাসি হয়ে যায়। সাহস করে মিতুল বলেই ফেলে, সিনেমায় নায়ক যাকে ইচ্ছে বানাস, বাস্তব জীবন থেকে আমাকে য্যানো নায়কের তালিকা থেকে বাদ দিস না। এ নিয়ে আরেক দফা হাসাহাসি হয়। এটা যে শুধু হাস্যরস, তাই নয়; বরং মিতুলের মনের কথাটাও প্রকাশ পায় ওই হাসি-তামাশার মধ্য দিয়েই।
নায়িকা হবার স্বপ্নে বিভোর তৃপ্তির ইচ্ছা সে চলচ্চিত্রে অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নেবে। এ জন্য চেষ্টা তদবিরেরও অন্ত নেই তার। বন্ধুদের সে বলে রেখেছে য্যানো কোনো পরিচিত প্রযোজক-পরিচালক, অভিনেতা কিংবা কোনো আত্মীয়-স্বজন থাকলে তাকে রেফার করে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া, ফিল্ম এ্যান্ড ড্রামা সোসাইটির কার্যকরী সদস্য। সে উপস্থাপনা করে, আবৃত্তি করে, মঞ্চনাটক করে। এসবের উপর কোনো প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার—সবকিছুতেই তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া, ফিল্ম এ্যান্ড ড্রামা সোসাইটির সভাপতি তার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র অধ্যাপক প্রীতম মনতোষ। তিনি তৃপ্তিকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন। তিনি তৃপ্তিকে সবসময় উৎসাহ দ্যান এবং তার ভূয়োসী প্রসংশা করেন। তিনি তৃপ্তিকে সবসময় বলে থাকেন, “তুমি যদি তোমার লক্ষ্যে অবিচল থাকো, সাফল্য তোমার পায়ে এসে লুটিয়ে পড়বে। আর তোমার ক্যারিয়ারের ব্যাপারে যতো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন, তোমার জন্য আমি সবই করতে চাই।”
তিনি যখন ‘তোমার’ শব্দটা উচ্চারণ করতেন, সেটাতে আলাদা একটা ভাবাবেগ মিশ্রিত থাকতো। প্রথম প্রথম এ্যামোন আশার বাণী শুনে তৃপ্তির চোখে আবেগে আনন্দ-অশ্রু চলে আসতো। তৃপ্তি প্রীতমের পা ছুঁয়ে সালাম করতো। জনাব অধ্যাপক তাকে থামিয়ে দিয়ে বলতেন, “দুদিনের পৃথিবীতে একে অপরের সাহায্য-সহযোগতিা না পেলে, পৃথিবীটা মধুর হয়না এবং বেশিদূর অগ্রসরও হওয়া যায়না। পৃথিবীটাই হলো লেনদেনের। বিনা প্রতিদানে কেউ কারো জন্য কখনোই কিছু করেনা। মনে রেখো, লায়বিলিটি ছাড়া য্যামোন অ্যাসেট ক্রিয়েট করা যায়না, তেমনি কাউকে কিছু না দিলে তার থেকে কোনোকিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করাটাও ভুল।” তাঁর কথাগুলো তৃপ্তির কানে অমৃতসুধার মতো ঠেকতো। সে তার হ্যান্ডব্যাগের ভেতর প্রীতম স্যোরের বাণীটা চিরকুট আকারে লিখে রেখে দ্যায় সবসময়। এটা দেখলেই তৃপ্তি মনে নতুন একটা উদ্যম অনুভব করে। কিন্তু তৃপ্তির ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অন্যকিছুর ঘ্রাণ পায়, অন্যকিছুর ইঙ্গিত দ্যায় ভদ্রলোকের আচার-আচরণ হতে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় তৃপ্তির কাচাকাছি থাকার অদম্য প্রয়াস, তার চোখে চোখে থাকার বিভোল ব্যাকুলতা, কাজ-অকাজের নানা ছুতোয় তৃপ্তির গা ছুঁয়ে যাওয়া…
চার
একমাত্র মেয়ের পড়াশুনার সুবিধার্থে মি. তালেব সপরিবারে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। তাছাড়া তার বদলিটাও ঢাকায় তার পরিবার স্থানান্তরে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে যে ভাড়া বাসাটায় তারা থাকেন, ঢাকায় আসার প্রথম থেকে তারা সেটাতেই আছেন। তার চাকরীজীবন শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। বছরখানেক আছে তার চাকরির মেয়াদ। এরপর নিরবচ্ছিন্ন অবসর! সময় কতো দ্রুতই না অতিবাহিত হয়! তালেব সাহেবের মনে হয়, এই তো সেদিন তিনি চকরিতে যোগদান করলেন। সদ্য ছাত্রজীবন শেষ করেছেন। চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন পথে প্রান্তরে। ঢু মারছেন অফিস থেকে অফিসে। কিন্তু চাকরির দেখা কোনভাবেই পাচ্ছেন না। কারখানা-দুর্ঘটনায় হাত হারানো পিতা আর মায়ের বোঝা লাঘব করার অদম্য প্রচেষ্টায় ব্রতী টগবগে তরুণ আবু তালেব তালহা। তালহা নামটা তার নানার দেয়া; সেটা তার সার্টিফিকেটে নেই। সে নামটা ধরে শুধু তাঁর নানাই ডাকতেন।
একদিকে চাকরি না পাওয়ার দুশ্চিন্তা অপরদিকে মিস রায়নার তাড়া। তার বাবা বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তালেবের সাথে রায়নার সম্পর্কটার ব্যাপারে তিনি শুরু থেকেই অবগত ছিলেন। তিনিও চাইছিলেন তাদের সম্পর্কটার একটা ইতিবাচক পরিণতি হোক। কিন্তু বাবা হিসেবে কোনো পিতাই তার কন্যাকে চালচুলোহীন পাত্রের হাতে তুলে দিয়ে নির্ভাবনায় থাকতে পারেন না। মি. তালেব কিছুতেই কিছু করে না উঠতে পারায় তিনি রায়নাকে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। অবসরে যাওয়ার আগেই তিনি তার একমাত্র কন্যার বিয়ে থা দিয়ে থিতু করে যেতে চান। যৌক্তিক কারণও রয়েছে এর পেছনে। কন্যাকে যোগ্য পাত্রে পাত্রস্থ করা এক প্রকার যুদ্ধ জয়। কর্মজীবনে যে-উদ্যম ও স্পৃহা থাকে, অবসরের পর সেটা থাকেনা। এছাড়া, নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর, মেয়েদের দেহ ও শরীরের বাহ্যিক সৌন্দর্য, কমনীয়তা, লাবণ্য ও জৌলুস ধীরে ধীরে কমে আসে। কমে আসে ছেলেপক্ষ থেকে তাদের কদর। সুন্দরের প্রতি মানুষের টান চিরন্তন। মেধা-মনন-জ্ঞান-শিক্ষার মূল্যায়ন যতোই থাকুক, সৌন্দর্যের প্রতি দুর্বলতা নেই— এমন নারী-পুরুষ পৃথিবীতে পাওয়া দুষ্কর।
কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। আবু তালেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে চাকরি মিললো বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ। সেকেন্ড ক্লাস জব। তাতে হয়তো মনোবাসনা পূর্ণ হলো না, তবে সমস্যার আপাতত সমাধান হলো। দুই পরিবার মিলে একটা দিনক্ষণ ঠিক করে তালেব-রায়নার বিয়ে হয়ে গ্যালো। একেবারেই অনানুষ্ঠনিক ও সাদামাটাভাবে।
তালেব সাহেবের শ্বশুর আব্দুল করিমের ইচ্ছে ছিলো একমাত্র কন্যাকে ধুমধাম করে বিয়ে দেবেন। কিন্তু মানুষের সব আশা তো পূরণ হয়না। এ নিয়ে আব্দুল করিমের মনে খেদ ছিলো। কিন্তু যখন দেখলেন তাঁর আদরের কন্যা মিস রায়না স্বামীর সংসারে বেশ সুখেই আছে, তখন তার মনোযাতনা ধীরে ধীরে লাঘব হয়ে আসে। এছাড়া, কোনো দুঃখের রেশই মানুষের মনে দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়না। মানুষের মন ও মনের অনুভূতিগুলো অনেকটা ক্ষয়িষ্ণু মাটির মতোন। কালের স্রোতে কখন যে ক্ষয় হয়ে যায়, সহজে বোঝা যায়না।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসেই মি. তালেবের চাকরীজীবনের প্রায় দুই যুগ সময় কেটেছে। কর্মজীবনের শেষপ্রান্তে এসে, সন্তানের পড়াশোনার খাতিরে তাকে ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে ইস্পাতকঠিন কংক্রিটের এই শহরে।
পাঁচ
তৃপ্তির এ্যাকাডেমিক পড়াশুনা শেষ পর্যায়ে।
এর মধ্যে জল গড়িয়েছে অনেক। মি. তালেব অবসরে চলে গ্যাছেন প্রায় তিন বছর আগে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে আছেন বিছানায়। কথা বলতে গেলে ঠোঁট কাঁপে এবং কথা জড়িয়ে যায়। সহজে বোঝা যায়না। হাঁটাচলা করতে অক্ষম বললেই চলে।
তৃপ্তির মা শারীরিকভাবে এখনো বেশ শক্তপোক্তই আছেন। অসুস্থ স্বামীর সেবা করে আর টেলিভিশনে সিরিয়াল দেখে তার দিন কাটে। এ্যাতো বেশি জাগতিক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত একজন নারী তিনি— বাইরে থেকে দেখে আন্দাজ করা কঠিন। বরং তার মুখারয়বের দিকে তাকালে মনে হয় তিনি য্যানো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষদেরই একজন। তৃপ্তি মেয়েটার স্বভাবেও তার মায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। মাঝে মাঝে সে ভাবে, জীবনমঞ্চে ভালো অভিনেতা হতে না পারলে নাট্যমঞ্চে ভালো অভিনেতা হওয়া অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে, জীবনটাই একটা রঙ্গমঞ্চ।
তৃপ্তি এখনো চিত্রজগতে তার ক্যারিয়ারের স্বপ্নে বিভোর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে; তবু এখনো হাল ছানেনি সে। স্বপ্নভঙ্গের প্রধান আঘাতটা সে পেয়েছে পিতার অসুস্থতায়। মি. তালেবের অফিসিয়াল অবসরগ্রহণের ক’দিন বাদেই তিনি গ্রাচুইটির টাকাটা হাতে পান। পুরো কর্মজীবনে হালাল-উপার্জনকারী মিস্টার তালেব, এ্যাতো বড় অঙ্কের টাকা হাতে পেয়ে, স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে পরামর্শ করতে বসলেন। কোন্ খাতে বিনয়িোগ করা যায়, সে ব্যাপারে। তৃপ্তি এ ব্যাপারে কোনো পরামর্শ না দিয়ে বললো, “আম্মু আর তুমি মিলে সিদ্ধান্ত নাও; আমি না হয় আরেকটু বড় হয়ে এসব নিয়ে ভাববো।”
তারপর অনেক রাত জেগে মিসেস রায়না আর মি.তালেব আলোচনা করলেন। মি. তালেব চাইছিলেন টাকাটা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে। মিসেস রায়নার মত সঞ্চয়পত্রে। মিসেস রায়না যুক্তি দেখালেন, “সঞ্চয়পত্র একটা নিরাপদ বিনিয়োগ। এছাড়া, এতে তোমার খাটাখাটনি করতে হবেনা। অবসর সময়টা উপভোগ করতে পারবে।”
পাল্টা যুক্তি দ্যাখালেন মি. তালেব— “চাকরি থেকে অবসরের পর সময় কাটানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করলে একদিকে তার সময়টা ভালো কাটবে, অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে লাভও বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
ছয়
থেকে থেকে যখন তৃপ্তিকে হতাশা ঘিরে ধরে, সে তার প্রীতম স্যারের বাণীটা আওড়ায়— ‘লক্ষ্যে অবিচল থাকো, সাফল্য তোমার পায়ে এসে লুটাবে।’
এ্যাতো দৃঢ় মনোবলেও মাঝে মাঝে চিড় ধরতে চায়। এই দুর্মূল্যের বাজারে, বাবার পেনশানের সামান্য টাকায় সংসার চালানো দুরুহ। বাবার পেনশান, নিজের দুটো ট্যুশানের বেতন আর সঞ্চয়পত্র হতে প্রাপ্ত মুনাফার কয়েকটা টাকায় বাড়িভাড়া ও সংসার খরচটা কোনোভাবে চলে যায়।
সাত
তৃপ্তির বাবার শরীর খারাপ দুদিন ধরেই। দীর্ঘদিন অসুস্থতায় থাকা মানুষটার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন একেবারে নিশ্চল, নিথর। ডাক্তার বলেছেন যতো দ্রুত সম্ভব, অস্ত্রোপাচার করাতে। তৃপ্তির সামনে ঘোর অন্ধকার! এ্যতোগুলো টাকা সে এ্যাতো অল্প সময়ে কীভাবে, কোত্থেকে যোগাড় করবে— ভেবে পাচ্ছিলোনা। হাতে যে কটা টাকা ছিলো, তা দিয়ে এ দুইদিন ধরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে আসছিলো। আজ বিকেলে ডাক্তার বললেন দ্রুত অস্ত্রপাচাার করাতে। সামনে দুদিন সরকারি ছুটি। বাবার সঞ্চয়পত্রটা ভাঙানোর একে তো সময় হয়নি, অন্যদিকে, ক্ষতি স্বীকার করেই না হয় সেটা ভাঙানো যেতো। কিন্ত বাবা অসুস্থ থাকায় স্বাক্ষর করতে পাচ্ছেননা। তাই সেটাও আপাতত সম্ভব হচ্ছেনা।
তৃপ্তির মায়ের পরামর্শে সে পাশের বাড়ির এক জ্যাঠাকে ফোন দিয়ে বললো যে, তাদের বাড়ির পাশের জমিটার বিনিময়ে হলেও তার কিছু টাকা দরকার। বাবার চিকিৎসার জন্য। সারাজীবন জমিলোভী এই মানুষটিও তৃপ্তিকে জমিটুকু বিক্রি না করার পরামর্শ দিলো। শেষে, কথা বললেন তৃপ্তির মা। কিন্তু যখন টাকার পরিমাণটা শুনলেন, তিনি বললেন, “আমরা গেরামের মানুষ! পঞ্চাশ লাক ট্যাহা কইত্তে পামু! দুই চাইর লাক অইলে একটা কতা আছিল্।”
তৃপ্তির ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র আপুর হাসব্যান্ড দেশের বাইরে থাকে। সেই সিনিয়র আপুকে ফোন করে সে কিছু টাকা চাইলো। যথারীতি সেখান থেকেও ‘না-বোধক’ উত্তর পেলো তৃপ্তি। তার সিনিয়র আপুর ভাষায় তাদের সাততলা বিল্ডিংয়ের কাজাটা চলমান। এই মুহূর্তে কোনো টাকা পয়সা তারা দিতে পারবেনা।
মিতুলের বাবা, মি. রাগীব, শহরের বড়ো কন্ট্রাক্টর। সে মিতুলকে ফোন করে কয়েকদিনের জন্য আর্থিক সাহায্য চাইলো। মিতুল বললো, “কোনো সমস্যা নেই! আমার কাছেই দুই লক্ষ টাকা আছে। আমি নিয়ে আসছি! তুই কোথায় আছিস!”— মিতুলের কণ্ঠে ব্যাগ্রতা।
ওপাশ থেকে তৃপ্তি বললো. “দুই লক্ষ টাকার ব্যাপর এটা নয়, দোস্ত। বাবার অপারেশানে কমসে কম চল্লিশ লক্ষ টাকা লাগবে। ডাক্তার পঞ্চাশ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।” অগত্যা মিতুলকে বাবার শরণ নিতে হলো। মিতুলের আবদার শুনে মি. রাগীব বললেন, “তা পঞ্চাশ লক্ষ টাকার ব্যাপার তো! সে আমি তোমাকে দিতেই পারি। কিন্তু টাকাটা দিয়ে তুমি কী করবে— আই মিন, তুমি কাকে, কী জন্য দেবে— সেটা আমার আগে পরিষ্কার হওয়া দরকার।”
মিতুলের কাছে বিস্তারিত শুনে শান্ত গলায় তিনি বললেন, “দ্যাখো. মিতুল! আমার কোষাগার তো কোনো দানসত্র নয় যে, কেউ চাইলেই আমি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা চ্যারিটি দিতে পারি!”
“বাবা তুমিই তো বলেছিলে গত মাসে ফ্লাইওভারের কাজ থেকে তোমার এক হাজার কোটি টাকা লাভ করেছো…” আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো মিতুল। মি. রাগীব ডান হাতের ইশারায় ছেলেকে দমিয়ে দিলেন।
উপায়ান্তর না দেখে তৃপ্তি তার বান্ধবী মিতালিকে ফোন দিলো। তার বাবা প্রধানমন্ত্রীর অফিসের বড়ো কর্তা। হেলিকপ্টার ছাড়া চলাফেরা করেননা। নিরাশ হতে হলো সেখানেও।
প্রিয়ন্তির বাবা কাস্টমসের বড়ো পদাধিকারী। কদিন আগেই কানাডায় তাদের তৃতীয় বাড়িটি কিনলেন। মালয়েশিয়া চতুর্থ বাড়ি কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে প্রিয়ন্তি তৃপ্তির সাথে গল্প করেছে কদিন আগেই। সে ছুটে গ্যালো প্রিয়ন্তির কাছে। বাবার কাছ থেকে গোমড়া মুখ করে ফিরে এলো প্রিয়ন্তি।
অসুস্থ বাবার বিছানার পাশে মাকে রেখে সে বললো, “মা, তুমি বাবার কাছে বসো। আমি দেখি, টাকার কোনো ব্যবস্থা করে উঠতে পারি কি না। নটার সময় রিপোর্টগুলো দেবে। তুমি রিসেপশান থেকে সংগ্রহ করে রেখো। ডাক্তার রাউন্ডে এলে দ্যাখাবে। আমাকে আপডেট জানিও।”
আট
তার দুজন ছাত্রের বাবার সঙ্গে কথা বলেছে। এককালীন তারা এ্যাতো বড়ো অঙ্কের টাকা দিতে পারেননা বলে জানিয়েছেন। দিতে পারলেই বা কী! দেবেনই কোন্ শর্তে, কোন্ অর্থে! ছাত্রের বাসা থেকে বেরিয়ে তৃপ্তি তার চোখের জলকে আর আটকে রাখতে পারলোনা। পথের পাশে একটা ফুচকার টঙ দোকান। গ্রাহকেরা ফুটপাতে বসে ফচকা খাচ্ছে। তৃপ্তির মনে হলো তার পা দুটো একেবারে হীনবল। মনের জোরে সে শরীরটাকে সামনে এগিয়ে নিতে চাইলো। পারলোনা। ধপাস করে ফুটপাতে বসে পড়লো সে। বসেই দুই হাতের করতল দিয়ে চোখ দুটো চেপে ধরে, মাথা নিচু করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কাঁধের দুপাশে ছড়িয়ে পড়লো তার পিঠে ছড়িয়ে থাকা ঘন কালো চুল। পাশে বসা এক যুগল ফুচকার প্লেট ফেলে তার কী হয়েছে, জানতে প্রবৃত্ত হলো। সাথের ছেলেবন্ধু ফুচকাওয়ালাকে বললো, “মামা, তাড়াতাড়ি পানি দাও তো!”
ছেলের সঙ্গে থাকা মেয়েবন্ধুটি তৃপ্তির দু বাহু শক্ত করে ধরে আছে। কেঁদেই চলেছে তৃপ্তি। ছেলেবন্ধুটি পানির বোতলটা নিয়ে মাথায় স্বল্প ছিটা দিতেই তৃপ্তি মুখ থেকে ডানহাত সরিয়ে, হাত নেড়ে পানি দিতে মানা করলো। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে তৃপ্তি বললো, “আপনারা কিছু মনে করবেননা, প্লিজ। আমার বাবা প্রচণ্ড অসুস্থ; হাসপাতালে ভর্তি। আমি এ জন্যই আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি।”— বলেই সে টিস্যু বের করার জন্য হ্যান্ডব্যাগের চেইনটা খুললো। টিস্যুর আগে বেরিয়ে এলো প্রীতম স্যারে বাণী লেখা সেই চিরকুট। চোখ না মুছেই, সে উপস্থিত সবাইকে অবাক করে দিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো বললো, “আপনারা কিছু মনে করবেননা! আমার এক জায়গায় যেতে হবে। এক্ষুণি।”— বলেই কারো উত্তর বা প্রতিক্রিয়ার প্রত্যাশা না করে এক প্রকার দৌড়েই সে একটা রিক্সায় চেপে বসলো।
তৃপ্তির মনে হতে লাগলো। এবার হয়তো সমস্যার একটা সমাধান নিশ্চয়ই হবে। নিশ্চয়ই প্রীতম স্যার কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন। তার মনে হতে লাগলো, বিপদের সময় অনেক সহজ সমাধানও কঠিন বলে মনে হয়।
সে যখন তার টিচারের বাসায় পৌঁছলো, তখন রাত এগারোটা। স্ত্রীকে ডেকে মি. প্রীতম নাস্তার ব্যবস্থা করতে বললেন। পরক্ষণেই আবার ডেকে বললেন, নাস্তা নয়, রাতের খাবারের ব্যবস্থা কর। ঘটনার আদ্যন্ত শুনে মি. প্রীতম খানিকটা ঝিম ধরে বসে রইলেন। মুঠোফনটা হাতে নিয়ে দুতিনটা ফোন করলেন। প্রত্যেকটা ফোন রাখার পর তৃপ্তি বলে, “স্যার, কিছু হলো?”
ততোক্ষণে মিসেস প্রীতম ওভেনে খাবার গরম করে, ডায়নিংয়ে রেখেছেন। মি. প্রীতম বললেন, “তুমি খাবারটা খেয়ে নাও। আমি দেখি, কিছু করতে পারি কি না।”
তৃপ্তি চলে গেলে তিনি আবারো ফোনটা হাতে নিলেন। কথা বললেন দীর্ঘ সময়। তৃপ্তি খাবার শেষ করে আগ্রহ নিয়ে অধ্যাপকের সামনে বসলো। খানিকটা পিনপতন নীরবতা। সেটা ভাঙলেন মি. প্রীতম। “তৃপ্তি, তোমার এই দুর্দিনে কী বলি! এমনিতেই তুমি একটা সাইকোলজিক্যাল ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছো। তোমার, তোমার পরিবারের জন্য কিছু করতে পারলে আমারও ভালো লাগতো। কিন্তু টাকার অঙ্কটা তো নেহায়েত ছোটো নয়! বিনা প্রতিদানে কারো জন্য কেউ কিছু করতে চায়না।…”
নয়
তৃপ্তি বাবার অপারেশান হয়েছে। ডাক্তারদের চেষ্টা-তদবিরের চেয়ে পরপারের টান অধিকতর শক্তিশালী ছিলো। এপারের সকল বন্ধন ছিন্ন করে মি. তালেব ওপারের ডাকে চলে গ্যাছেন। তৃপ্তির শুটিংয়ের তারিখ পিছিয়েছে তিনবার। আজ ওর শুটিংয়ের তারিখ ছিলো। সকাল বেলা বিমর্ষ মুখে সে শুটিংয়ের কাজে বেরিয়েছিলো।
মন ভালো নেই মিসেস রায়নারও। পিতার মৃত্যুর পর, এই প্রাণোচ্ছ্ল মেয়েটার মুখে একবারও তিনি হাসি দেখেননি। যে জন যাবার চলে গ্যাছে প্রকৃতির নিয়মে। পেছনে পড়ে আছে তার কিছু স্মৃতি।
এই তিন মাসে অনেক চেষ্টা তদবির শেষেও তিনি সঞ্চয়পত্রটা ভাঙাতে পারেননি। যদিও তিনি নিজেই সঞ্চয়পত্রের নমিনি, তারপরও দিতে হয়েছে উপযুক্ত আদালত হতে প্রাপ্ত উত্তরাধিকারপত্রের কপি। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
দশ
তৃপ্তির ঘর হতে কোনো সাড়াশব্দ আসছেনা। মিসেস রায়না প্রায় তিন ঘণ্টা পর মেয়ের দরোজায় মৃদু কড়া নাড়লেন। অপেক্ষা করতে লাগলেন আগ্রহের সাথে। এসির মধ্যেও দরদর করে ঘামছেন তিনি। স্থির, শান্ত, গম্ভীর তার মুখাবয়ব। আবার কড়া নাড়লেন তিনি। এবার পূর্বের তুলনায় খানিকটা জোরে। ছিটকানি খুললো ভেতর থেকে। সুনামিতে সৃষ্ট তীব্র জলোচ্ছ্বাসের বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মতো য্যানো আছড়ে পড়লো মেয়েটি তার মায়ের বুকে। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো উচ্চরবে। দৌড়ে এলো লিপি। মিসেস রায়না ইশারায় তাকে সরে যেতে বললেন। আবার ছিটকানি পড়লো দরোজায়।
তৃপ্তির মাথায় আলতোভাবে হাত মিসেস রায়না। মায়ের কোলে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে অঝোরে কাঁদছে তৃপ্তি। ক্ষয়িষ্ণু শোকের মতোই ধীরে ধীরে থেমে আসে তৃপ্তির কান্না। “শুধু কান্না করলে আমি বুঝবো কী করে যে, কী হয়েছে। আমাকে নির্দ্বিধায় বল্— কী হয়েছে।” তৃপ্তির ভারী কণ্ঠস্বর আবার ডুকরে উঠলো।
এগারো
ঝলমলে পর্দার সেরা উঠতি নায়িকা তৃপ্তি। সেরা অভিনেতার পুরস্কার হাতে সে অতীতে কথা ভাবছে। ভাবছে, সবাই শুধু ঝলমলে পর্দার নিয়ন আলোটুকুই দ্যাখে। পর্দার অন্তরালের কুৎসিৎ অন্ধকার কেউ দ্যাখেনা।
কামারের চর
২০২৪-০৭-২৮ রবিবার, বিকেল ৪:৪৫